একজন মানুষের সবচেয়ে জৌলুসপূর্ণ সময় হলো তার যৌবনকাল ।আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ সময় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানোর লাগে বলা চলে ছাত্র জীবন চলমান থাকে ।একটি মানুষকে পরিবার, সমাজ, সংগঠন ,রাজনীতি ইত্যাদি সকল বিষয়ে সম্পৃক্ত থেকে কাজ সম্পাদন করতে হয় ।কারণ আমরা একে অপরের উপর কোন না কোন ভাবে নির্ভরশীল তবে মানুষের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করা অর্থাৎখলিফা হিসাবে আল্লাহর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা। আমাদেরকে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে । কোন অবস্থাতেই যেকোনো একটি টপিকের দিকে বেশি জুকে যাব না যা অন্যান্য কর্মকাণ্ড থেকে আমাকে বিরত রাখার নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। তুমি যদি মুসলিম হও তবে তোমার করণীয় কি? কেমন হবে তোমার জীবন যৌবন? জবাবে কিছু মৌলিক কাজের কথা বর্ণনা করছি যা তোমার জীবনের নতুন পথকে উন্মোচিত করবে। আদর্শবান যুবক যুবতী গঠনে এ বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- আল্লাহর হক আদায় করা
- মাতা পিতার সেবা যত্ন
- নিজের ও পরিবারের হক আদায়
- প্রতিবেশীর হক আদায়
মোটের উপর বলা চলে দুই ভাগে এই কর্মসূচি গুলো বিভক্ত
- আল্লাহ তায়ালার হক
- বান্দার হক
এ দুইটি বিষয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আদায় করা একজন মানুষের জন্য অর্থ বিশেষভাবে কর্তব্য ও বটে। আদর্শবান যুবক যুবতী গঠন এর জন্য এগুলো মানার বিকল্প নেই।
ফরজ ইবাদতের অন্যতম নামাজ
প্রতিদিন একজন মানুষকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সংবিধান আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন হুজুরের শরীরে ব্যতীত সকল নামাজ পুরুষের জন্য জামাতে এবং নারীর জন্য আরো কিছু সম্পাদন করা লাগে যেমন-
- ওযু
- গোসল
- মিসওয়াক
- আযান
- ইকামত
- নামাজ পরবর্তী মাসনুন দোয়া ইত্যাদি
একজন মুসলিম যুবক-যুবতীর উচ্চ মানসম্পন্ন জীবন রূপায়নে মাধুর্যতা পূর্ণ এই কাজগুলোর বিকল্প নেই। মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন সফলকাম তারাই যারা অত্যন্ত যত্নের সাথে নামাজ আদায় করে। সুতরাং একজন যুবক যুবতীর জীবনের পূর্ণমাত্রায় সৌন্দর্য আনয়নে হেদায়েতের মশাল কুরআনে বর্ণিত নামাজের বিকল্প চিন্তাই করা যায় না। আদর্শবান যুবক যুবতী গঠন এর জন্য এগুলোর পূর্ণ জ্ঞান আবশ্যক।
মুসলিমদের দ্বিতীয় ফরজ হলো রোজা
নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে সম্পাদন করতে হয় রোজার ব্যাপক আমল যুবক যুবতীদের করা উচিত কারণ নৈতিকতা গঠনে এর তাৎপর্য চূড়ান্ত প্রমাণিত ।নিয়ম মেনে সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সকল প্রকার পানহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নামই রোজা।মুসলিম যুবকদের যৌবনের সীমারেখা রক্ষায় রোজার চেয়ে মহা ঔষধ পৃথিবীবাসীর অজানা।আল্লাহ তা'আলা বলেন "রোজা আমার জন্য আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব" রোজার সাথে সম্পর্কযুক্ত কিছু বিষয় আছে যেমন-
- ইফতার
- সেহরি
- তারাবি
- সাদাকাত
প্রত্যেকটি মুসলিমযুবক-যুবতীদের ফরজ পালনের ক্ষেত্রে কোন গরিমোষী করা উচিত নয় ।কারণ এটি রবের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত নীতিমালা এবং নির্দেশ। আদর্শবান যুবক যুবতী গঠন এর জন্য অবশ্যই এই বিধানকে মানতে হবে।
হজ পালন সমর্থন ব্যক্তির জন্য ফরজ
প্রাপ্তবয়স্ক সকল সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে হজ পালন করতে হবে মুসলমান যুবক-যুবতী যদি হজ্জের সকল শর্ত পূরণ করতে পারে তবে তাকে অবশ্যই আল্লাহর বিধান হজ পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।নারীদের ক্ষেত্রে মাহরাম পুরুষ ছাড়া কোন অবস্থাতেই হজ পালন বৈধ নয় ।মকবুল হজ্জের সোয়াব জান্নাত ছাড়া আর কিছুই না। আদর্শবান যুবক যুবতী গঠন এর জন্য শর্ত পূরণ হওয়ার পর অবশ্যই পালন করতে হবে।
মুসলিমদের চতুর্থ ফরজ হলো যাকাত
যাকাত অন্যতম ফরজ যা শর্ত পূরণের পর আদায় করা লাগে। তবে আট টি ক্ষেত্র ব্যতীত যাকাত দেওয়া যায় না।মুসলিম যুবক যুবতীগণ যদি শর্ত পূরণ করতে পারে তাহলে তারা এ মহান বিধান পালন করতে পারবে যাতে কিছু মাত্র বাধা প্রদান করার ক্ষমতা কারো নাই।তবে মুসলিম যুবক-যুবতীদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রক্ষায় অতিরিক্ত কিছু এবাদত করার জোর দেয়া হয়েছে যেমন-
- একজন মুসলিম যুবক যুবতী রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ তালাকে ডাকবে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করবে
- প্রতিদিন কুরআন তেলাওয়াত করবে
আদর্শবান যুবক যুবতী গঠন এজন্য এ কথাগুলোর পূর্ণ অনুশীলন খুবই জরুরী।
যেকোনো একটি দীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে থেকে কাজ করবে ।তবে দীনের মৌলিক জ্ঞান অর্জন করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সময় ক্ষেপণ করা যাবে না।সর্বদা ইসলামকে জানা বোঝা ও আমল এর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
বান্দার হকের কথা যদি আলোকপাত করি তাহলে প্রথমে যে কথাটি আসার দাবিদার তা হল:
- মাতা পিতার কথা শোনা ও সেবা যত্ন করা
আল্লাহ তা'আলা বলেন আল্লাহর সন্তুষ্টির পর মাতা পিতার সাথে সদাচরণ করআ। মাতা পিতার সাথে ভালো আচরণের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার ব্যাপক আলোচনা করেছেন এবং তাদের অবাধ্যতার শাস্তির কথাও তুলে ধরেছেন। তাদের সাথে আচরণ কেমন হবে তাও বর্ণনা করে দিয়েছেন তিনি ।হাদিসে আছে -হযরত মুয়াবিয়া ইবনে জাহমিয়া থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একদিন জিহাদে যাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন তোমার কি মা আছে? জবাবে তিনি বললেন হ্যাঁ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তার সেবা করা তোমার উপর কর্তব্য। কেননা তার পায়ের নিচে তোমার জান্নাত। এগুলো আদর্শবান যুবক যুবতী গঠন এর কার্যপ্রণালী।
সুতরাং মুসলিম যুবক মুসলিম যুবক-যুবতীদের আচরণের ক্ষেত্রে মাতা পিতা সর্বাধিক ইহসানের দাবিদার ।মাতা পিতার অবাধ্যতা চূড়ান্ত পর্যায়ের ব্যর্থতা ও লাঞ্ছনার পূর্বাভাস।
মানুষের জৈবিক চাহিদা আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত
তিনি মানুষের জীবনের সকল সমস্যার সমাধান কুরআনুল কারীমে লিপিবদ্ধ করেছেন শৈল্পিকভাবে। স্রষ্টা যেমন চাহিদা দিয়েছেন তেমনি তা ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট কিছু পথ দিয়ে দিয়েছেন ।সীমালংঘন করা কখনো ঈমানের দাবিদার ব্যক্তির কর্ম হতে পারে না।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
তোমার শরীরের প্রতি তোমার কর্তব্য রয়েছে, পরিবার পরিজনের প্রতি তোমার কর্তব্য রয়েছে , তোমার স্ত্রীর প্রতি তোমার কর্তব্য রয়েছে (আল হাদিস)
এ কারণে আমাদের শরীরের হক ও সঠিকভাবে সম্পাদন করতে হবে।যেমন-
- পরিমিত ঘুম
- পরিমিত খাবার
- নিয়মিত গোসল
- স্বামী-স্ত্রী একে অপরের চাহিদা পূরণ
আদর্শবান যুবক যুবতী গঠন এর জন্য এই নিয়মগুলো অবশ্যই সমাজে চালু করতে হবে।
মানুষের মনের সৌন্দর্য যেমন সকল সৌন্দর্যের ঊর্ধ্বে তেমনি মানব মনের সজীবতা মানুষের সকল কর্মের মাধুর্যতাকে পূর্ণতা দান করে।একজন মানুষের মনের পরিশুদ্ধি তার ভালো থাকার প্রথম শর্ত। তাই মনকে সুন্দর রাখতে আপনাকে কিছু কাজ করতে হবে কারণ মন ভালো থাকলে কাজ করতেও ভালো লাগে প্রফুল্লতা আসে।
একজন যুবক যুবতী মনকে ফ্রেশ করার জন্য লেখালেখি করতে পারে। যেমনঃ
- কবিতা
- গান
- গদ্য
- পদ্য
- ইসলামিক সংস্কৃতির চর্চা করতে পারে
- ইসলামিক থিয়েটার
- নাটক
খেলাধুলা ইত্যাদি যে কোন যুবক যুবতীদের মনকে পুরনো সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখবে এবং ভালো চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে। তবে সবকিছু ইসলামের নীতিমালা মাফিক হতে হবে।
একজন যুবতীদের যৌবনের তালিকায় অন্যতম অবস্থানে থাকবে আত্মীয়তার বাঁধন রক্ষা ও মজবুত রাখা
মুসলিম হিসেবে একজন যুবক রক্ত সম্পর্কিত সকলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে তাদের পূর্ন সহযোগিতা করবে পাশে থাকবে সব সময় এটাই ইসলামের শিক্ষা।আল্লাহ বলেন "হে মানুষ তোমরা ভয় করো আল্লাহর আল্লাহকে যার পবিত্র নামে তোমরা একে অপরের অধিকার দাবি করো এবং সম্মান করো তাকে যে তোমাকে জন্ম দিয়েছে" এ জন্য কোন অবস্থাতেই আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না।একে অপরের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মানসিকতা ব্যতীত ইসলামিক সমাজ গঠন তো হবেই না নিজেদের ঈমান ঠিক থাকবে কিনা তাই বলা মুশকিল হয়ে যাবে।
আল্লাহর হাবিব নবী সাঃ সে ব্যক্তি পরিপূর্ণ মুমিন নয় যে পেট ভর্তি করে খায় অথচ তার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে। আদর্শবান যুবক যুবতী গঠন এর জন্য উপরে আলোচিত প্রত্যেকটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিজেদের পরিবার এবং আপন সমাজে পূর্ণ অনুশীলনের দায়িত্ব অনুভূতি জাগ্রত করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ মরীচিকার পিছনে চলা




إرسال تعليق
আসসালামু আলাইকুম
আপনাদের সকলকে আমাদের রাইটার ফারুকী ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে আন্তরিক মোবারকবাদ ও শুভেচ্ছা ।আমরা বর্তমান আধুনিকতা নামক অশ্লীলতা এবং বেহায়াপনার বিরুদ্ধে ইসলামের পক্ষে কাজ করার সুদূর প্রসারীর চিন্তা ভাবনা এবং অপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি ।সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্যকে মানুষের কাছে ফুটিয়ে তোলা এবং ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব মহত্ব মানব মনে স্থাপন করে দুর্নীতি এবং অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখি আমরা ।আমরা বিশ্বাস করি খোলাফায়ে রাশেদিনের চেতনার অনুরূপ চরম এবং তীব্র দায়িত্ব অনুভূতি জাগ্রত করার মাধ্যমে সমাজের নেতৃত্বে যোগ্য ব্যক্তিদের পদার্প সম্ভব। আমরা চাই তোমাদের মত যুব সমাজ আগামী দিনে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে ইসলামের সুমহান বাণীকে পৃথিবীবাসীর কাছে পৌঁছে দেবে। আমাদের সহযোগী তোমরাই হবে আমরা চাই আমাদের সাথে এবং আমাদেরকে সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা করুন ।তোমাদের মতামত আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।